বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জামিনে মুক্তি পাওয়ার যে ক্ষীনতম সম্ভাবনাও নেই, বিএনপির নেতা কর্মীদের কাছেও তা ষ্পষ্ট। চার মামলায় জামিন আবেদন আদালতে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। উচ্চ আদালত থেকে নিম্ন আদালতে এসব আবেদনের শুনানি ও সিদ্ধান্ত আসতেও পাঁচ থেকে ছয় মাস লেগে যাবে। নিম্ন আদালত তিন মামলায় জামিন না মঞ্জুর করেছেন। আগামী দু‘মাসের মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাষ্ট দুর্নীতির মামলার রায় হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। খালেদা জিয়া দন্ডিত হলে এই মামলায় সহসা জামিন লাভের সম্ভাবনাও ক্ষীন। এই অনিশ্চয়তার পরও জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনীর মাধ্যমে দন্ডিত ব্যক্তির জাতীয় কি স্থানীয় কোন নির্বাচনেই অংশ নেয়ার বিদ্যমান সুযোগ রহিত করার প্রস্তাব রয়েছে।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সূত্রে জানা যায়, আরপিও সংশোধনীর ব্যাপারে সরকার এখনও সিদ্ধান্তমূলক পর্যায়ে আসেনি। তবে নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে এবং সংশোধনীর প্রস্তাব উচ্চ পর্যায়ের বিবেচনায় রাখা হয়েছে।
জানা যায়, জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী দুর্নীতি, অনিয়ম, চারিত্রিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগে দন্ডিত কোন ব্যক্তি নির্বাচনের অযোগ্য হবেন। দন্ডভোগের পাঁচ বছর অতিক্রম না হওয়া পর্যন্ত তিনি জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের কোন নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। দন্ডিত ব্যক্তি উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেলেই তিনি নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবেন। এতে দন্ডিত ব্যক্তির উচ্চ আদালতে নিম্ন আদালতের দন্ডের বিরুদ্ধে আপিল এবং আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দন্ডিত ব্যক্তির নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ রয়েছে। আইনগত এই সুযোগ নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদসহ কয়েকজন রাজনীতিবিদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া যাতে আইনের এই সুযোগ নিতে পারেন তার জন্য তাঁর আইনজীবীরা আইনগত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্ত খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা থাকায় এগুলোর জামিন আবেদন নিষ্পত্তি সময় সাপেক্ষ। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বিরাজমান অবস্থায় নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না।
জানা যায়, আপিল আবেদন নিষ্পত্তি হওয়া সাপেক্ষ এবং দন্ডিত ব্যক্তি জামিন পেলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন আরপিওর এই বিধান রহিত করার চিন্তা করা হচ্ছে। দন্ডিত ব্যক্তি উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেলেও উচ্চ আদালতে আপিল আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি নির্বাচনের অযোগ্য থেকে যাবেন। আপিলে আদালতের রায় খারিজ হলে বা ভিন্নতর রায়ে দন্ডিত না হলেই কেবল নিম্ন আদালতে দন্ডিত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নেয়ার অধিকার পাবেন। বিএনপির নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেছেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নির্বাচন, রাজনীতি থেকে বিদায় করার জন্য সরকার যাবতীয় ব্যবস্থা করছে। নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছে যে, আরপিও সংশোধনের সিদ্ধান্ত কমিশন নেয়নি। আইন মন্ত্রনালয় সূত্রে জানা যায়, যে তারা আরপিও সংশোধনীর খসড়া তৈরীর কাজ প্রায় শেষ করে এনেছেন। চ‚ড়ান্ত করা হবে সরকারের সিদ্ধান্তের পর।
জানা যায়, আরপিও সংশোধনীর ব্যাপারে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দ্বিতীয় চিন্তাও কাজ করছে। খালেদা জিয়া একটি বা দুটি মামলায় জামিন পেলেও আরো বেশ কয়েকটি মামলায় জামিন আবেদন অনিষ্পন্ন থেকে যাবে। তারেক রহমান জামিন আবেদন করতেই পারছেন না। এরিমধ্যে তিনি মানি লন্ডারিং মামলায় দন্ডিত। জামিন আবেদন করতে হলে তাঁকে সশরিরে উপস্থিত থাকতে হবে।
ইতিমধ্যে নিম্ন আদালতে কয়েকটি মামলায় জামিন না মঞ্জুর হয়েছে। এসব মামলায় উচ্চ আদালতে জামিন পেতেও দীর্ঘ সময় লাগবে। আইনগত লড়াই করে জামিন লাভ ও নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ খালেদা জিয়া পাবেন না। এ কারনে আরপিও সংশোধন না করার বিষয়টিও উচ্চ পর্যায়ের ভাবনায় রয়েছে বলে জানা যায়।