একটি দুর্নীতি মামলায় এগার বছর আগে আওয়ামী লীগ নেতা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে জজ আদালতের দেওয়া ১৩ বছরের সাজার রায় বাতিল করে তাকে খালাস দিয়েছে হাই কোর্ট। মায়ার আপিলের ওপর পুনঃশুনানি শেষে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাই কোর্ট বেঞ্চ গতকাল সোমবার এ রায় দেয়। আট বছর আগে হাই কোর্টের অন্য একটি বেঞ্চ মায়ার আপিল শুনে একই রায় দিয়েছিল। কিন্তু পরে সর্বোচ্চ আদালত হাই কোর্টের ওই রায় বাতিল করে পুনঃশুনানির আদেশ দেয়। আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান। মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার, ড. বশির আহমেদ ও সাঈদ আহমেদ রাজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রোনা নাহরীন ও এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। রায়ের পর মায়ার আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, অবৈধ সম্পদ অর্জনের কোনো প্রমাণ দুদক দেখাতে পারেনি। আদালত আপিল মঞ্জুর করে সাজা বাতিল করে রায় দিয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে এই আইনজীবী বলেন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া খালাস পেয়েছেন, নির্বাচন করতে উনার সামনে কোনো বাধা নেই। অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, আদালত আপিল মঞ্জুর করে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে বেকসুর খালাস দিয়েছে। আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনকে জানিয়েছি। কমিশন সিদ্ধান্ত নিলে সে অনুযাযী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ৬ কোটি ২৯ লাখ ২৩ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়া এবং ৫ কোটি ৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ১৩ জুন মায়ার বিরুদ্ধে সূত্রাপুর থানায় এ মামলা করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক নূরুল আলম। জরুরি অবস্থার মধ্যেই ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত এই আওয়ামী লীগ নেতাকে ১৩ বছর কারাদÐ দেয়; সেই সঙ্গে তাকে পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের ২৭ অক্টোবর হাই কোর্টে আপিলের রায়ে মায়াকে খালাস দেওয়া হয়।
দুদক পরে হাই কোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে লিভটু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে। সে আবেদনে ২০১৫ সালের ১৪ জুন হাই কোর্টের খালাসের রায় বাতিল করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বেঞ্চ। সেইসঙ্গে হাই কোর্টে নতুন করে আপিল শুনানির নির্দেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত। মায়া আপিল বিভাগের আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে বিচারকরা আগের সিদ্ধান্তেই অটল থাকেন।এরপর আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী হাই কোর্টে মায়ার আপিলের ওপর নতুন করে শুনানি শুরু হয়। গত ১৪ অগাস্ট পুনঃশুনানি শেষে হাই কোর্ট রায়ের জন্য ৭ অক্টোবর দিন ঠিক করে দেয়। কিন্তু রোববার আসামিপক্ষের আবেদনে আবারও শুনানি করা হয় এবং সোমবার আদালত মায়াকে খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করে।