স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘের নবযাত্রা
দেশের ফুটবলে স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘের ইতিহাস অতোটা পুরোনো নয়। মাত্র ১৯ বছর বয়সী ক্লাবটি দেশের শীর্ষ লিগে এসেছে মাত্র দুই বছর আগে। অভিষেকটা তারা রাঙিয়েছিল দেশের ফুটবলের পাওয়ার হাউস বসুন্ধরা কিংসকে হারিয়ে। স্বপ্নের মতো সেই শুরুকে অবশ্য বেশি দূর নিতে পারেনি তারা। প্রথম মৌসুমেই অবনমিত হতে হয় তাদের। পরের মৌসুমে দ্বিতীয় স্তর থেকে নামতে হয় তৃতীয় স্তরে।
দুইবার অবনমনে ক্লাবের কর্তাদেরও পতন হয় তাদের জায়গায় দায়িত্বে আসে এক ঝাঁক নতুন মুখ। আর নতুনরা দায়িত্ব নিয়েই দেখছেন নতুন করে ঘুঁড়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন।
ক্লাবটির দায়িত্বে এই সব নতুন মুখের একটাই লক্ষ্য বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ফেরা। সেটা অবশ্য এত সহজ হবে না। সে জন্য দুই ধাপ পেরুতে হবে তাদের। তাদের প্রথম লক্ষ্য সিনিয়র ডিভিশন ফুটবল লিগ জেতা।
তাদের সেই স্বপ্নে পথদ্রষ্টা হিসেবে পেয়েছে তারা পরীক্ষিত কোচ কামাল বাবুকে। আর পেছন থেকে রয়েছে বড় স্বপ্নে বিভোর একঝাঁক কর্মকর্তা। নতুন সভাপতি সৈয়দ গোলাম রূপসের নের্তৃত্বে স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘ চাইছে মাঠে সেরা হয়ে ফিরতে।
দলটির কোচ কামাল বাবু বাংলাদেশের ফুটবলে পরীক্ষিত সৈনিক। প্রিমিয়ার লিগ, চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের বড়-ছোট অনেক দলকে সাফল্য এনে দেওয়া এই কোচ ছিলেন সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের ইয়ুথ ডেভেলপমেন্টের দায়িত্বে। তবে তার নিজ এলাকার ক্লাব স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘের কর্তাদের অনুরোধে ফেলতে না পেরে দায়িত্ব নেন শক্তিশালী দল গড়ার। নিজের মতো করে সারা দেশে ঘুরে ঘুরে পছন্দের ফুটবলারদের একত্রিত করে কমলাপুল স্টেডিয়ামে আয়োজন করেন ট্রায়ালে।
যেই ট্রায়ালের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে বেছে নেন ৩৪ জনকে। ক্লাব তাদের জন্য ব্যবস্থা করেছে উন্নত আবাসন ও খাওয়া দাওয়ার।
ক্লাবটির তরুণ সভাপতি রূপস বলেন, 'ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি যারা চ্যাম্পিয়নশিপ এনে দেন, সেই খেলোয়াড়রাই থাকেন সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। ভালো থাকার জায়গা, ভালো খাবার জুটে না। তাদের ভালো না রেখে কি করে ভালো ফলাফলের আশা করা যায়?'
এ ছাড়াও খেলোয়াড়দের আশ্বাস দিয়েছেন রূপস, 'আমি কথা দিচ্ছি, তোমাদের জন্য সর্বোচ্চ মানের ফুডিং-লজিং এবং লজিস্টিক সাপোর্ট আমরা নিশ্চিত করবো। তোমাদের সেরা মানের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে, ক্রীড়া সরঞ্জামাদীও হবে সর্বোচ্চ মানের। যাতে অন্য ক্লাবের খেলোয়াড়রা তোমাদের দেখে হিংসে করে। আমাদের সর্বাত্ম চেষ্টা থাকবে তোমাদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার। তোমরা কেবল নিজেদের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করো। আমাদের লক্ষ্য একটাই ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়া। চ্যাম্পিয়ন হতে হতে প্রিমিয়ার লিগে ফেরা।'
দেশের ফুটবলের সেরা স্কাউট কোচের তকমা আগেই পেয়েছিলেন। ঢাকার ফুটবল ছাড়াও সারা দেশের ফুটবলে থেকে বড় প্রতিভা এনে দিয়েছেন তিনি। স্বাধীনতাকে নিয়ে তিনিও শোনালের আশার কথা, 'আমরা সাদা দেশে ঘুড়ে ঘুড়ে খেলোয়াড় সংগ্রহ করেছি। চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বিভাগ থেকে খেলোয়াড় এনেছি। তাদের ওপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে। ক্লাব কর্তারা কথা দিয়েছেন খেলোয়াড়দের প্রিমিয়ার মানের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করবেন। আমরাও আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। সেরার লক্ষ্য হয়েই খেলবো। তবে মনে রাখতে হবে শিরোপার সঙ্গে ভাগ্যও জড়িত।'
২০২২ প্রিমিয়ার লিগে তলানীতে শেষ করলেও বসুন্ধরা, সাইফের মতো দলকে হারানো, আবাহনী, শেখ জামালের মতো দলগুলোকে রুখে দিয়ে আশা জাগিয়েছিল স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘ। প্রথম ম্যাচে কিংসকে হারানোর সেই স্মৃতিটা পুঁজি করে একঝাঁক নতুনমুখ ফেরার স্বপ্নে শুরু করেছেন নবযাত্রা।