ব্যারিস্টার খোকনের দলীয় পদ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম থেকে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনায় সৃষ্ট জটিলতা আপাতত নিরসন হলেও তার দলীয় পদ নিয়ে ধোঁয়াশা এখনও কাটেনি। তিনি দলের যুগ্ম মহাসচিব পদে বহাল থাকবেন নাকি অব্যাহতি দেওয়া হবে, বিএনপির হাইকমান্ড এখন সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয় এবং দলের সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে খোকন ইস্যুতে সৃষ্ট জটিলতা আপাতত নিরসন হয়েছে।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে এর আগে সেখানে বিবাদমান দুপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিকেল ৪টা থেকে ঘন্টাব্যাপী বৈঠকে মহাসচিব ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এ ছাড়া দলীয় আইনজীবীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নিতাই রায় চৌধুরী, জয়নাল আবেদীন, আহমেদ আযম খান প্রমুখ।
শনিবার (২০ এপ্রিল) জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতির পদ থেকে মাহবুব উদ্দিন খোকনকে অব্যাহতি দেয় সংগঠনটি। গত ৬ ও ৭ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন হয়। এতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ঐক্য প্যানেলের (নীল প্যানেল) প্রার্থী জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হট্টগোল, মারধর, মামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটে।
বিএনপিপন্থী আইনজীবী ফোরাম ভোট জালিয়াতি, কারচুপি ও মনগড়া ফলাফলের অভিযোগ করে। এ ঘটনায় বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের আসামি করে মামলা করা হয়। মামলায় গ্রেপ্তারও করা হয়। এ পরিস্থিতিতে বিজয়ী সভাপতি পদ ছাড়া আরও তিনজন সদস্যকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সমিতির এ মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণ না করার আহ্বান জানায়। কিন্তু খোকন দায়িত্ব নেন।
এ ছাড়া তিনি ফোরামের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সম্পর্কে অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ করে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের এ ফোরাম। এ পরিপ্রেক্ষিতে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর থেকে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে, দলের যুগ্ম মহাসচিব পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে খোকনকে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আইনজীবী ফোরামের দুপক্ষ নিজ নিজ অবস্থান থেকে যুক্তি, পাল্টা যুক্তি তুলে ধরেন। তবে বৈঠকের শেষ পর্যায়ে খোকন ও কায়সার কামাল একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন। ফলে দুই পক্ষের মধ্যে আপাতত কোন্দল নিরসন হয়েছে বলে মনে করছেন বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা। পরে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
বৈঠকে উপস্থিত একজন আইনজীবী নেতা কালবেলাকে বলেন, এখন মাহবুব উদ্দিন খোকনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা এবং তিনি সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কিনা, সে সিদ্ধান্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেবেন।
মাহবুব উদ্দিন খোকন ইস্যুতে বিএনপির উচচপর্যায়ে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটিতেও দুই ধরনের ভাষ্য পাওয়া গেছে। বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা ও আইনজীবীদের অধিকাংশ খোকনকে অব্যাহিত দেওয়ার ঘটনায় বিব্রত। তারা মনে করেন, খোকনের মতো আইনজীবী নেতা এখন আর দলে নেই। তাকে অব্যাহতি দেওয়ার মাধ্যমে যাদের উৎসাহিত করা হয়েছে তাদের আইন অঙ্গণে গ্রহণযোগ্যতা কম। তবে কারও কারও মত ছিল, দলের কেউ দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে নয়। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনসহ যেকোনো বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত যারা অমান্য করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। খোকনের বিরুদ্ধে কেন নেওয়া হবে না?
এর আগে সোমবার (২২ এপ্রিল) সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন বলেন, ফোরামের তো গঠনতন্ত্রই নেই। সে (কায়সার কামাল) কীভাবে বহিষ্কার করে? যে পর্যন্ত গঠনতন্ত্র না হবে, সে পর্যন্ত কাউকে বহিষ্কার করা যাবে না। যত বহিষ্কার করা হয়েছে, তা আইনত কার্যকর নয়।
৮ ঘণ্টা আগে